কম্পিউটার কীভাবে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে? তথ্য প্রসেসিং এ ট্রানজিস্টর এর ভূমিকা

কম্পিউটার কীভাবে তথ্য প্রসেসিং করে? 

যদি জিজ্ঞেস করি প্রযুক্তি খাতে  এখন পর্যন্ত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন কী ছিল? অনেকেই অনেক কিছু বলবেন। মোবাইল, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইসি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আমি বলব প্রযুক্তি খাতে এখন পর্যন্ত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো "ট্রানজিস্টর"।


আপাতত ট্রানজিস্টর কীভাবে তৈরি হয়, এর ইতিহাস, এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। এই লেখায় এতটুকুই বুঝানোর চেষ্টা করব কম্পিউটারে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করার জন্য ট্রানজিস্টর এর ভূমিকা কতটুকু৷ 


যাই হোক, ট্রানজিস্টর দিয়ে লেখাটা শুরু করলেও লেখার টপিক ট্রানজিস্টর না। আর্টিকেলটি " কীভাবে কম্পিউটার তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে" এটা নিয়ে। ট্রানজিস্টরের গঠন, কীভাবে কাজ করে এসব নিয়ে বিস্তারিত বলে লেখাটা জটিল করতে চাচ্ছি না।


কম্পিউটার তথ্য প্রসেসিং করে "প্রসেসর" এ। যেটি লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরি। আর তথ্য সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহার করে হার্ড ড্রাইভ ডিস্ক।  

প্রসেসর এর ভেতরে ট্রানজিস্টর(ছবিঃ এক্সট্রিম টেক)



কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক গ্যাজেট "ট্রানজিস্টর" এর উপর নির্ভরশীল। 


আমরা এখন সবাই এটা বুঝতে পেরেছি যে একবিংশ শতাব্দীর সম্পদ হলো তথ্য। কম্পিউটার, মোবাইল বা কোনো ইলেকট্রনিকস এ তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে "চিপ" এর মধ্যে। এই চিপ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরি। ৪০-৫০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপের প্রসেসর এ বিলিয়ন বিলিয়ন ক্ষুদ্র ট্রানজিস্টর রয়েছে। আজকের এই লেখাটা ঠিক এই বিষয় নিয়ে। যাই হোক এদিকে পরে আসছি। 


ট্রানজিস্টর দুই ধরনের কাজ করে। অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে ও সুইচ হিসেবে। এই দুইটি কারণে ট্রানজিস্টর তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। 


ট্রানজিস্টর যখন অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করে, তখন সেটি এক প্রান্তে একটি ইলেক্ট্রিক সিগনাল গ্রহণ করে। অপর প্রান্ত দিয়ে ঐ সিগনাল থেকে বড় একটি সিগনাল বের করে। অর্থাৎ ট্রানজিস্টর এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক কারেন্টের বিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। 


সর্বপ্রথম টেলিফোনে অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয়েছিল। ইভেন স্মার্টফোনগুলোতেও অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয় যেগুলো সাউন্ডের ইলেক্ট্রিক তরঙ্গকে বিবর্ধন করে ট্রানজিস্টর এর মাধ্যমে। 


ট্রানজিস্টরের যে বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তা হলো সুইচ হিসেবে কাজ করা। ট্রানজিস্টর যখন ছোট ইলেক্ট্রিক সিগনাল গ্রহণ করে বড় ইলেক্ট্রিক সিগনাল আউটপুট দেয়, তখন সেটি অ্যামপ্লিফায়ার হিসেবে কাজ করে। ঠিক একই সাথে সুইচ হিসেবেও কাজ করে!


যখন ট্রানজিস্টরে বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে, তখন এটি অন। যখন বিদ্যুৎ প্রবাহ থাকে না, তখন এটি অফ। আমার আপনারা কম্পিউটার ঠিক এই অন-অফের উপর ভিত্তি করে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে। কীভাবে? 


ট্রানজিস্টরের অন অফের মধ্যেই আছে বাইনারির খেলা। বাইনারী দুই ভিত্তিক নাম্বার সিস্টেম। যেখানে শুধুমাত্র 1 ও 0 দিয়ে কোনো সংখ্যা, অক্ষর, বা যেকোনো তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা হয়। 


এখন ট্রানজিস্টর এর মধ্যে বিদ্যুৎ পরিচালনা করলে এটি অন হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ ট্রানজিস্টরটি 1 সংরক্ষণ করে। আবার বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করলে এট অফ। তখন ট্রানজিস্টরটি 0 সংরক্ষণ করে। 


আর এই 1 ও 0 এর এর লম্বা সারির মাধ্যমে কোনো লেটার বা নাম্বার বা কোনো ইনফরমেশন সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিকে বাইনারি বলে। আর এই সারির প্রত্যেকটি 1 বা 0 কে বলা হয় "বাইনারি বিট"।  বর্তমান ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর হিসাব ভিন্ন। 


বাইনারির একটি ডিজিট অর্থাৎ প্রত্যেকটি 1 এবং 0 কে " বাইনারি বিট" বলা হয়। আর আটটি 1 এবং 0 যখন কোনো লেটার না সংখ্যাকে রিপ্রেজেন্ট করে, তখন তাকে এক বাইট বলা হয়। অর্থাৎ এক বাইট মানে একটি সংখ্যা অথবা একটি অক্ষর। 




বাইনারি বিট এর মাধ্যমে সকল তথ্য হার্ডড্রাইভ এ দুই-ভিত্তিক সংখ্যা আকারে থাকে। একটা ইমেজ, বা একটা ভিডিও, টেক্সট ফাইল যাই বলেন না কেন, তা কম্পিউটার বাইনারি আকারে সংরক্ষণ করে। পরিচালনা করে। আউটপুট হিসেবে তা ইমেজ বা ভিডিও বা টেক্সট শো করে। 


অর্থাৎ বুঝা গেল কম্পিউটার এর মূল ভাষাই হলো বাইনারি। আর কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে তথ্য প্রসেসিং করে। এই কাজে সবথেকে বেশি ভূমিকা রাখে ট্রানজিস্টর। 


এছাড়া হার্ড ড্রাইভ অথবা র‍্যাম-রম এ কম্পিউটার অন্য পদ্ধতিতেও তথ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনা করে। এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তী পর্বে লিখব। 

Post a Comment

0 Comments