জীবন বা প্রাণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কী? যেটা জড়বস্তু থেকে জীবনকে আলাদা করেছে? তা হলো "চেতনা" বা "কনশাসনেস"। জড়বস্তুর চেতনা নেই। চেতনা জিনিসটা জীবকে বেচে থাকার তাড়না দেয়। শিকার, জীবিকা নির্বাহ, প্রজনন, সারভাইভ ইত্যাদি চেতনা থেকে উদ্ধৃত। আর কমপ্লেক্স ইমোশন জিনিসটা আসলেই কমপ্লেক্স।
আরো একটি জিনিস যা পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের থেকে মানুষকে আলাদা করে তা হলো " কমপ্লেক্স ইমোশন"।
মজার কথা হলো রোবোট, প্রোগ্রাম, কম্পিউটার, এআই এগুলোর চেতনা নেই, কোনো কমপ্লেক্স ইমোশন নেই। এগুলো নেহায়ত কিছু জড়বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। যা শুধু মাত্র তথ্য পরিচলনার কাজে ব্যবহার করা হয়।
এখন রোবোটিক ইন্ডাস্ট্রি, এআই ইন্ডাস্ট্রির যত উন্নতি হচ্ছে, আমরা আশংকা করছি তা মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এটা আমরা কেন মনে করি? কারণ আপাতত দৃষ্টিতে হোমো স্যাপিয়েন্স থেকে বুদ্ধিমান(!), স্মার্ট(!), ফিটেস্ট সারভাইভরস(!) এই প্ল্যানেট আর্থ এ নেই। বুদ্ধিমত্তার বিকাশ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো জড়বস্তুর মধ্যে " চেতনা" নামক জিনিসটা দেখে অভ্যস্ত নই। তাছাড়া আমরা একই ক্যাটাগরির দুই বুদ্ধিমান অস্তিত্ব একসাথে বসবাস করলে কী হয় আমরা জানি না।
স্বয়ং স্টিফেন হকিং এআই ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকিত। যখন উনার মতো মানুষ শংকা প্রকাশ করেন, আমরা সাধারণ মানুষও শংকিত না হয়ে পারি না।
তবে আমি মনে করি এআই বা রোবোট মানুষকে টেকওভার করতে পারবে না৷ আমার মতে এআই জিনিসটা "মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে" এমন ধারণা করা অমূলক। আবার এআইকে হালকাভাবেও নেওয়া যায় না। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক।
বুদ্ধি জিনিসটা হলো জ্ঞান আহরণ ও প্রয়োগ করার ক্ষমতা। সেই জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত ও সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতা আমরা হোমো স্যাপিয়েন্সদের আছে। কিন্তু কোনো প্রোগ্রাম বা কম্পিউটার এর এই ক্ষমতা নেই। জ্ঞান আহরণ, অভিজ্ঞতা লাভ ও সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোকে যদি "বুদ্ধি" ধরি, তাহলে হোমো স্যপিয়েন্স বুদ্ধিমান। একই বুদ্ধিমাত্রার প্রাণী বা স্বত্বার সাথে আমরা পরিচিত না। তাই একই বুদ্ধিমাত্রা সম্পন্ন ভিন্ন দুইটি স্বত্বা একসাথে থাকলে এর ফলাফল কী হবে, সেটা অনিশ্চিত। মানুষের চেয়েও উন্নততর বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী আছে, যেমন ডলফিন, তিমি। কিন্তু "জ্ঞান আহরণ ও প্রয়োগ" বিবেচনা করে আমরা একে আমাদের চেয়েও উন্নততর বলতে পারি না।
যখন আমরা কম্পিউটার বা একটি প্রোগ্রামকে জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগের ক্ষমতা দেই তখন তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলে। সংরক্ষিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি প্রোগ্রাম এ অনেক সমস্যার সমাধান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সেই সমাধানগুলো এনালাইসিস করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমাধান দেয় বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আরেকটু বুঝার সুবিধার্থে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ক্যাটাগরাইজড করে ফেলি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে। Narrow Intelligence, General Intelligence ও Super Intelligence.
আমরা বর্তমানে Narrow ক্যাটাগরিতে পড়ে রয়েছি। Narrow ক্যাটাগরির এআই অনেকটা খেলনার এআই এর মতো৷ মানে অন্য দুই ক্যাটাগরির তুলনায় Narrow ইন্টেলিজেন্স বাচ্চাদের খেলনা৷ এটি শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে এক্সপার্ট। যেমন সার্চ ইঞ্জিন বা এসইও তে গুগল, বিং বা ইউন্ডেক্স যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। কারণ এর ভেতরে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের সমস্যার সমাধান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
২য় ক্যাটাগরি হলো General Intelligence। এটি মানুষের মত চিন্তা করতে, সিদ্ধান্ত নিতে, প্ল্যান করতে সক্ষম। প্রায় মানুষের বুদ্ধিমত্তার সমান ক্ষমতা সম্পন্ন। এই ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের কাছে এটা নাই! আমরা এখন জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পর্যায়ে যেতে পারি নি!
সর্বশেষ ও শক্তিশালী ক্যাটাগরি হলো Super Intelligence। যেটি মানুষের বুদ্ধিমত্তা থেকেও শক্তিশালী। নিসন্দেহে জেনারেল ক্যাটাগরির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স থেকেও শক্তিশালী। আমরা যেভাবে চিন্তাভাবনা করি, কাজ করি, সিদ্ধান্ত নেই, তার থেকে অনেক কার্যকরীভাবে সিদ্ধান্ত ও চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম Super Intelligence ক্যাটাগরির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স!
Narrow ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। ভয় অন্য দুই ক্যাটাগরি নিয়ে। কারণ অন্য দুইটা ক্যাটাগরির একটা মানুষের মতো চিন্তা করতে সক্ষম, অন্যটি মানুষ থেকেও বেশি বুদ্ধিমান! আর আগেই বলেছি একই মাত্রার বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রাণী একসাথে বসবাসের সাথে আমরা পরিচিত নই। General ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্সকে ভয় পাওয়াও যেতে পারে, না পাওয়াও যেতে পারে৷ সম্ভাবনা ৫০/৫০।
এখন Super ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স এর উপর একটু আলোকপাত করি। তার আগে আমরা হোমো স্যাপিয়েন্সদের কিছু বদ-অভ্যাস তুলে ধরি। প্ল্যানেট আর্থে জ্ঞান আহরণ ও প্রয়োগের দিক থেকে আমরা সবথেকে এগিয়ে। অর্থাৎ বলা যায় আমরা সর্বোচ্চ মাত্রার বুদ্ধিমান(প্ল্যানেট আর্থে। যদিও আমাদের থেকে বেশি মাত্রার বুদ্ধিমান প্রাণী মহাবিশ্বে আছে কিনা কেউ জানি না)৷
সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়ে আমরা কী করি? আমরা আমাদের সুবিধার জন্য আমাদের জ্ঞান প্রয়োগ করি। যার মধ্যে কিছু জ্ঞান প্রয়োগ নিম্নবুদ্ধিমান প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত হূমকি স্বরুপ। যেমন আমরা কাঠ ও জায়গার জন্য অতিরিক্ত হারে গাছ কাটছি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ছড়াচ্ছি। বেশ কিছু প্রাণীকে আমরা নিজের হাতে বিলুপ্ত করেছি। অর্থাৎ আমরা সর্বোচ্চ বুদ্ধিমত্তার প্রাণী, নিম্ন বুদ্ধিমত্তার প্রাণীদের জন্য হুমকি স্বরুপ। কেন? কারণ আমরা আমাদের সুবিধার জন্য আমাদেরই আহরিত জ্ঞান প্রয়োগ করি। সেটা অন্য কোনো স্বত্তার জন্য খারাপ হোক বা নাই হোক।
আর এটাই প্রত্যেক বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য সত্য।
এখন Super ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান। তাছাড়া সেই General ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স থেকেও শক্তিশালী যে ক্যাটাগরি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে। এখন বুঝতে পারছেন স্টিফেন হকিং কেন শংকা প্রকাশ করেছেন?
Super ইন্টেলিজেন্স যদি তার নিজের সুবিধার জন্য এমন কিছু করে ফেলে, যেটি মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়? আমার ভয় এখানে নয়। ভয়টি অন্য জায়গায়।
যেহেতু General ও Super ইন্টেলিজেন্স মানুষের থেকে স্মার্টভাবে চিন্তা করতে সক্ষম হবে, সেহেতু অবশ্যই তাদের মধ্যে নিজে নিজেকে প্রোগ্রাম করার ক্ষমতা থাকবে। হয় তাদের মধ্যে এই ক্ষমতা থাকবে, নয়তো তারা অর্জন করবে।
এই "নিজে নিজেকে প্রোগ্রাম করা" র ক্ষমতাও মানবজাতির জন্য খুব বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
দ্বিতীয় ভয়ের কারণ মানুষের দ্বারা এআই এর অপব্যবহার! অলরেডি ন্যারো ইন্টেলিজেন্স দ্বারাও এই কাজটি করা হচ্ছে। যেমন রিসেন্টলি হ্যোয়াটসঅ্যাপ এর প্রাইভেসি ইস্যু।
তুলনামূলক কম শক্তিশালী বা শক্তিশালী ইন্টেলিজেন্সও মানুষ যেভাবে ব্যবহার করবে, সেভাবে এটি বিহেভ করবে৷ এখন কিছু স্বার্থবাদী মানুষ নিজের স্বার্থে যদি এর অপব্যবহার করে? তখন তা হবে সবথেকে মারাত্মক। নিউক্লিয়ার সাইন্সও মানুষের উপকারের জন্য আবিষ্কার করা হয়েছিল৷ কিন্তু এর অপব্যবহার কতটুকু মারাত্মক ছিল তা আমরা সকলেই জানি।
হিরোশিমায় নিউক্লিয়ার সাইন্স এর ধ্বংসযজ্ঞ |
এআই নিজে না যতটুকু ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, মানুষের কারণে তার থেকে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আরেকটি বিষয় লেখার লোভ সামলাতে পারছি না। "কমপ্লেক্স ইমোশন" বিষয়টা লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনের ফল। আমরা হুট করে একটি প্রোগ্রামের মধ্যে "কমপ্লেক্স ইমোশন" ঢুকিয়ে দিতে পারি না। এটা অসম্ভবও! আমরা সর্বোচ্চ একটি মডেল তৈরি করতে পারি, যেটি হাসির এক্সপ্রেশন, কান্নার এক্সপ্রেশন নকল করতে পারবে। কিন্তু এক্সপ্রেশন আর কমপ্লেক্স ইমোশন এক জিনিস না।
সেই হিসেবে আমরা বলতে পারি এআই এর অপব্যবহার না করা হলে, এটি কখনোই আমাদের নিয়ন্ত্রণ বা টেকওভার করতে পারবে না।
আমার ভয় এআই নিয়ে নয়। ভয়টা আমাদেরকে নিয়েই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনোই নিজে নিজে থেকে মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ নাও হতে পারে। কারণ এআই যত উন্নত হবে, তার সিকিউরিটির একটা না একটা ব্যবস্থা বের হবেই।
স্টিফেন হকিং বলেছিলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবসভ্যতার জন্য খারাপ একটি আবিষ্কার। কিন্তু এর সম্পূর্ণ দোষ এআই কে দেওয়া যাবে না। মানবসভ্যতার জন্য যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কুফল বয়ে আনে, তবে এর জন্য দায়ী থাকব আমরা হোমো-স্যাপিয়েন্সরাই!
1 Comments
Usability – Something that will frustrate players is that if a on line casino site is tough to make use of. Moving between video games and options should be simple, whether or not on desktop or cell. The finest on-line casinos clearly separate different video games, whereas buyer assist, bonus and payment strategies are all accessible in seconds too. Despite being simplistic in fashion, the Dafabet Casino 빅카지노 is easy to use and environment friendly.
ReplyDelete