আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ইতিহাস (টাইমলাইন অব এআই)

 



যদি বলা হয়ে থাকে ২০২০ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা বদলে গেছে, তাহলে একটাই প্রশ্ন উঠে আসবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কিসের ভিত্তিতে হবে। উত্তর হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সেন্সর বেজড প্রযুক্তি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ভিত্তিক। 


বিশ্বের বড় বড় সব টেক জায়ান্ট এই তিনটি জিনিস নিয়ে কাজ করছে। সরকার ও বিজনেস জায়ান্টদের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সেন্সর প্রযুক্তি ও এআই এ বিনিয়োগের পরিমাণ তো দেখার মতো। 


আজকাল আমরা যেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি, যেই এপলিকেশন ব্যবহার করি না কেন, তা সবই AI ব্যবহার করে। ফেসবুক থেকে শুরু করে গুগল, ইয়াহু, ইন্সটাগ্রাম, এমনকি সামান্য একটা ফটো এডিটর এপলিকেশনও। 


জানলে হয়তো অবাক হবেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি এর ধরনা নতুন কিছু না। হ্যা, গত ৩ দশকের মধ্যে এআই সেক্টরে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে।


কিন্তু এআই এর স্পেসিফিক টাইমলাইন দেখলে দেখা যায় সেই ঐতিহাসিক গ্রিক মিথের আমল থেকেই এআই এর ধারণা আছে! 


গ্রিক মিথলজির পাথর, ভাস্কর্য প্রযুক্তি বিষয়ক দেবতা Hephaestus বুদ্ধিমান রোবোটিক্সের ধারণা প্রবর্তিত করেন৷ তিনি টেলস (Talos) নামে একটি তাম্র যোদ্ধা তৈরি করেছিলেন ক্রিপ্ট দ্বীপ পাহারা দেওয়ার জন্য! রোবোটিকস যোদ্ধাটি তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে। সেই সময় এটিই ছিল লেটেস্ট রোবোটিকস সাইন্স অথবা এআই সাইন্স! 


৮০০ শতাব্দীর দিকে রসায়ন শাস্ত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তৎকালীন আরব বিজ্ঞানীরা। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জাবের ইবনে হাইয়ান। তখন রসায়ন শাস্ত্রকে "আল-কেমি" বলা হতো। আল-কেমির একটি শাখা ছিল "টাওকিন(Tawkin)"। টাওকিন সেই শাখা যেখানে ল্যাবেটরিতে কীভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করা যায় তা নিয়ে গবেষণা হতো। ব্যপারটা অদ্ভুত মনে হলেও যেনে রাখা ভালো ঐ সময়ে আরবের গোটা আল-কেমি খুবই আজিব ছিল। জাবের ইবনে হাইয়ান " এরাবিক আল-কেমিক থিওরি" নামে একটি প্রকাশ করেন, যেখানে এর সাহায্যে ল্যাবে কৃত্রিমভাবে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করার এলগরিদম ছিল। 



এরপর ১২০০ থেকে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অনেক অনেক অসম্পূর্ণ বা সম্পুর্ন থিওরি আসতে থাকে। 



তবে আধুনিক বা সভ্য জগতে এআই এর চর্চা শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরই। বিখ্যাত ইংরেজ গণিতবিদ টুরিং এআই নিয়ে খুবই জ্বালাময়ী একটি বক্তব্য রেখেছিলেন ১৯৪৭ সালেই! এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য থেকেও কম ছিল না! 


এলান টুরিং



এরপর ১৯৫০ সালে অফিশিয়ালি Computing Machinery and Intelligence এই বইয়ে এলান টুরিন একটি মেশিনের মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা অর্জনের সম্ভাব্যতা তুলে ধরেন৷ তার বিখ্যাত একটি উক্তি "একটি মেশিন যদি মানুষের মত চিন্তা ও কাজ করতে পারে, তবে সেই মেশিনকে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে"! 


১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম একটি এআই এপ্লিকেশন ডেভলপড করা হয় যেটি সফলভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। 


১৯৫০ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ ছিল এআই এর স্বর্ণযুগ(আমার মতে)। কারণ এই সময়ে শুধু থিওরি ডেভলপড হয় নি, পুরা এআই ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপ হতে থাকে। ডিজাইন থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি সাক্সেসফুল প্রজেক্ট তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। 


১৯৬০ থেকে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দও একইভাবে চলছিল। অনেক প্রোগ্রাম ডেভলপড হতে থাকে। ১৯৬৯ সালে বিশ্বে সর্বপ্রথম First International Joint Conference on Artificial Intelligence (IJCAI) অনুষ্ঠিত হয়। 


এরপর থেকে এআই কর্পোরেট সেক্টর দখল করতে থাকে। এআই এর জন্য অনেক অনেক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভলপড করা হয়। কমার্শিয়ালি কর্পোরেট সেক্টরে এআই এপ্লিকেশন ব্যবহার শুরু হয়। বেশ কয়েকটি এআই ভিত্তিক গেম তৈরি করা হয়, যা ঐ সময়েই কিছু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেয়। যেমন উল্লেখযোগ্য একটি হলো রিভের্সি নামের একটি বোর্ড গেমকে " লোগিস্টেলো" নামে প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। ঐ সময়ের রিভের্সি এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন Takeshi Murakami কে "লোগিস্টেলো" ৬-০ স্কোরে হারিয়ে দিয়েছিল। 


১৯৯২ সালে নাসা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা শুরু করে দেয়। 


২০০০ সাল এর পর এআই এর ধারণা বিশ্বকে অনেকখানি বদলে দেয়। এমন নতুন নতুন এপ্লিকেশন তৈরি হতে থাকে, যা ঐ সময়ের মানুষের কাছে সায়েন্স ফিকশন ছিল। 


এখন ২০২১ সাল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন কোন পর্যায়ে আছে তা আমরা সবাই জানি। দৈনন্দিন জীবনে বেশ কয়েকটি এপ্লিকেশন আমরা ব্যবহার করি যেগুলো এআই ভিত্তিক। যা আমাদের জীবনকে পুর্বের থেকে সহজ করে দিয়েছে। 


অ্যামাজন এর এলেক্সা (এআই ভিত্তক ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট) 



টুরিন তার বিখ্যাত উক্তিতে বলেছিলেন যে মেশিন মানুষের মতো চিন্তা করতে সক্ষম, তাকে বুদ্ধিমান মেশিন বলা যাবে। তবে বর্তমানে আমাদের এআই সিস্টেম এতটুকু ডেভলপড হয় নি, যে এটি মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে। 


আর মানুষের মত চিন্তা করার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার, কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে General ক্যাটাগরির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর। আমরা এখন Narrow পর্যায়ের এআই এ আছি! 


মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান এআই হলো Super ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স! 


এখন প্রশ্ন, মানুষ নিজের থেকে বুদ্ধিমান কিছু তৈরি করতে পারে না আর পারবেও না। তাহলে কী Super ক্যাটাগরির ইন্টেলিজেন্স স্বপ্নই থেকে যাবে? নাকি General এআই সুপার এআইকে তৈরি করবে?


জানি প্রশ্নটি পড়ার সময় বা প্রশ্নটি নিয়ে ভাবার সময় একটা প্যারাডক্সের সম্মুখীন হবেন! যদি সেই প্যারাডক্স খুজে পান, তাহলে অভিনন্দন! 

Post a Comment

0 Comments